Table of Content

Muhammad Harun
NA
NA
1 articles

বিমান ভ্রমণে কিছু মজার চিত্র

লেখক: মুহাম্মদ হারুন Category: প্রবন্ধ (Essay) Edition: Dhaboman - Eid 2018

 

বেশ কয়েক বছর থেকে বিশেষ করে ২০১০ এর পর থেকে প্রতি বছরই আমাকে কয়েকবার করে ঢাকায় যেতে হয়েছে । মূলত: পারিবারিক ব্যাবসার কারণেই যাওয়াটা। ঢাকা সফরে আজকাল ঢাকায় যাওয়ার চেয়ে আমার কাছে ভ্রমণ সময়টাই বেশ ভালো লাগে। এর কারণ খুব একটা খোঁজার চেষ্টা করি নাই বা কখনো ভেবে দেখিনি। হয়তো আব্বা-আম্মার গত হওয়ার কারণে অথবা বয়স হচ্ছে কিংবা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আছি এই কারণে ঢাকাকে অতটা আর আগের মতো মিস করি না। এখন ঢাকায় প্লেন অবতরণ করার পর আর আগের মতো উল্লসিত হই না। কত দ্রুত লাগেজে আসবে বেল্ট এ সেটাই মুখ্য, সেই সাথে ঢাকার বাসা থেকে কত তাড়াতাড়ি গাড়ি পাঠিয়ে কেউ এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যাবে সেটাই আমার কাছে গুরুত্ব থাকে।

গত কয়েক ট্রিপ এ বেশ কিছু মজার ব্যাপার দেখেছিলাম সেটাই আজ লেখার চেষ্টা করবো। প্রতিবারই দেখা যায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এরাইভাল হলে ইমিগ্রেশন এর বিদেশী পাসপোর্ট কাউন্টারে লাইনে দেশি পাসপোর্টধারীদের; মূলতঃ এদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্চের দেশগুলো থেকে আগত বাংলাদেশিরাই  বেশি, যারা উপরে সাইন দেখেও না বুঝার কারণে লাইন দাঁড়িয়েই যান। লাইনের শেষে কাউন্টারে এসে এরা জানতে পারেন এবং আবার দেশি পাসপোর্টধারীদের কাউন্টারে নুতন করে লাইন এ দাঁড়াতে হয়।  ডানে বায়ে অনেক কর্মকর্তা কে দেশি ভি আই পি যাত্রীদের লাগেজ টানতে ব্যাস্ত কিন্তু এদের এই তথ্য দিতে পারেন না যে এটা তাদের কাউন্টার নয়।  এতদিন পর দেশে ফিরে এই অল্প শিক্ষিত যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। 

 এবার ঢাকা থেকে ফেরার সময় দেখলাম আমার পেছনের চারজন বিদেশী পাসপোর্টধারীকে ডিঙিয়ে এক দেশি পাসপোর্টধারী ভদ্রলোক কাউকে তোয়াক্কা না করেই সোজা ইমিগ্রেশন কাউন্টারে চলে গেলেন এবং সেখানে  দাঁড়িয়েই রীতিমতো তার বৌ বাচ্চাদেরকেও ডাকতে লাগলেন।  আমার সামনে দুই ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীর এক জন কে বললাম উনি কি তোমাদের সামনে ছিল নাকি? উত্তরে বললো ‘না’- তো আমি পিছন থেকে বললাম ভাই, "আমরাও তো লাইন এ আছি" এভাবে চলে গেলেন? অনেকটা রাগান্নিত স্বরে পাশের কাউন্টারের উপরের সাইনবোর্ডের দিকে আঙ্গুল তুলে আমাকে ইংরেজিতে বললো, সি ডেট ইজ ইওর লাইন! আমি এবার ইংরেজইতেই উত্তর দিলাম, "নো দিস টু আর ফর ফরেইন পাসপোর্টস, অন ইওর লেফট ইজ সার্ক কান্ট্রিস এন্ড ফারদার ডাউন বাংলাদেশী পাসপোর্ট কাউন্টার।" ভদ্রলোক ওয়েল ড্রেসড, স্যুটেড -বুটেড, দেখে মনে হলো প্রায়ই বিদেশে যান. আমাকে রাগান্নিত ভাবে ইউ গো ! ইউ গো ! বলতে বলতে পিছনে গিয়েই বৌ বাচ্চার সাথে আবার বিদেশিদের লাইনেই দাঁড়ালো, তবুও বিদেশী পাসপোর্টধারীদের লাইন দিয়েই তার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবে, অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর চেষ্টা আরকি। আবার বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দেশি পাসপোর্টধারীদের কাউন্টার দিয়ে পার হতে 

গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ক্ষেত্র বিশেষে । আমার বাম দিকের দেশী পাসপোর্টধারীদের কাউন্টারে দেখলাম এক কানাডিয়ান বাংলাদেশী দম্পতি কোনো একটা বিষয়ে বুঝাপড়ার চেষ্টা করছে কর্মরত ইমিগ্র্যাশন কর্মকর্তার সাথে। যেটার সারমর্ম হলো, তাদের কানাডিয়ান পাসপোর্ট এ "নো ভিসা রেকওয়ার্ড" সীল নাই এবং এরা ঢাকা আসার সময় ‘আত্ম-চোরাচালান’ হয়ে ইমিগ্রেশনকে বোকা বানিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু তারা ফেরার সময় আবার বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে দেশী পাসপোর্টধারীর কাউন্টার দিয়ে বের হতে গিয়ে যত বিপত্তি। এখন তাদেরকে নতুন করে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বলা হলো। পরবর্তীতে অবশ্য প্লেনের দরজা বন্ধের একটু আগেই হন্তদন্ত হয়ে বিমানে উঠতে বুঝলাম তাদের একটা "দফারফা" হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ফ্লাইটটি ধরতে পেরেছিলো।

উপরের এসব যাত্রী মূলত শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য ধ্যানধারী; আবার কিছু অল্প শিক্ষিত দেশীরাই অনেক সময় উচ্চ শিক্ষিতর মতো ব্যবহার করে। যেমনটি হয়েছিল ২০১২ সালে যখন সপরিবারে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম কুয়েত এয়ারে। কুয়েত সিটিতে এসে জানতে পারি ঢাকা থেকে কানেকটিং ফ্লাইট মিস করাতে কুয়েতে দুইদিন সহ লন্ডনেও আরো একদিন থাকতে হবে। যেহেতু টরন্টো এয়ারপোর্টে ভায়রা ভাই আমাদের পিক করতে আসবে তাই কুয়েত সিটি ভ্রমণের এক পর্যায়ে একটি শপিং মল থেকে টরোন্টোতে ফোন করার জন্য কলিং কার্ড খুজছিলাম যাতে সে আর এয়ারপোর্ট এ না আসেন। মধ্যপ্রাচ্চের শপিং মল গুলোতে বাঙালিদের মূলতঃ দেখা যায় ওভারঅল ড্রেস পরে ক্লিনিং এর কাজ করছে। এই রকম এক দেশি ভাইকে ফোন এর কথা বলাতে সে অতি উৎসাহী হয়ে উঠলো। আমাকে বললো, আপনি আসছেন কুয়েতে আর আমি আপনাকে সামান্য একটা ফোন করাতে পারুম না, এইটা একটা কথা কইলেন?

সে আমাদের এক বিশাল পারফিউম স্টোরে নিয়ে রীতিমতো আদেশের সুরে ভারতীয় স্টোর ম্যানেজার কে বললো, “ভাই সাব, ইধার ফোন দো, দেশি ভাই কো কল করনা হায়"; সে তার হাত থেকে ফোন নিয়ে আমাকে টরন্টোতে কানেক্ট করালো, আমি চল্লিশ সেকেণ্ডের কম সময় কথা শেষে করে প্রথমতঃ স্টোর ম্যানেজারকে ধন্যবাদ দিয়ে দশ ডলার দিতে চাইলে সে আমাকে বললো, ‘এই টাকা আমি কোনো ভাবেই নিতে পারবো না’, বরং হাসতে হাসতে বললো, আমার চাকরি থাকবে না, এটা ও প্রায়ই করে থাকে এবং আমি বরং ওর দেশপ্রেমর এই টান প্রচন্ড ভাবে উপভোগ করি।‘ স্টোরে থেকে বেরিয়ে এসে মিজানকে জোর করেও দশটা ডলার হাতে দিতে পারি নাই। অল্প বেতনের চাকুরী সত্ত্বেও ওর সেদিনকার মহানুভবতায় আমার মনটা ভরে গিয়েছিলো এবং সেটা অনেকদিন মনে থাকবে।

আমার এক বন্ধু সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এ রিয়াদ হয়ে ঢাকা যাওয়ার সময় অসাবধানবশতঃ রিয়াদ এয়ারপোর্টে কানেকটিং ফ্লাইটটি যে এগারো ঘন্টা স্টপ ওভার ছিল তা খেয়াল করেনি। তো আমার বন্ধুটি রিয়াদ এয়ারপোর্টে সৌদিয়ার এক অফিসারকে বলেছিলো কিভাবে একটা ট্রানজিট ভিসা পাবে। ভদ্রলোক বললো যে সৌদি আরবে কোনো ট্রানজিট ভিসা সিস্টেম নাই। উল্টো বললো, তুমি সৌদিয়ায় ট্রাভেল করছো কেন, তুমি যাবে হলো বিমানে! আমরা সৌদিয়ার টরন্টো ফ্লাইটটি মূলত চালু করেছি কিছু সৌদি নাগরিকের জন্য যারা কানাডাতে পড়াশোনা করে তাদেরকেই আনা নেয়ার জন্য। সৌদিয়া কর্মীদের এধরণের নেগেটিভ মার্কেটিং সত্ত্বেও এটা ভালোই চলছে! আমার বন্ধুটি বেশ সুপুরুষ এবং কানাডিয়ান নাগরিক হবার কারণে হয়তো তাকে বলেছিলো, তোমাকে আমাদের এয়ারপোর্টর ফার্স্ট ক্লাস লাউঞ্জে এক্সেস দিচ্ছি, সেখানে তুমি এই এগারো ঘন্টা থাকতে পারো. বন্ধুটি তাকে অনুরোধ করেছিল যে, আমার সাথে আরো এক দেশি ভাই আছে যার পাশের সিটে একটানা চৌদ্দ ঘন্টা বসে আমি টরন্টো থেকে আসছি, তাকেও যদি একটু তোমাদের এই "আল ফুরসসান" লাউঞ্জে সুযোগ দিতে। সৌদিয়ার সেই অফিসার অবশ্য সেই দেশি ভাই কে সুযোগ না দেওয়ায় আমার বন্ধু স্বার্থপরের মতো একা সেই সুযোগটিও নেয়নি। পুরো ব্যাপারটা পাশে দাঁড়ানো সেই ওভার অল পরিহিত এক দেশি ভাই দেখে বললো, আসেন ভাই, আপনাদেরকে আমাদের এয়ারপোর্টের মসজিদে থাকার ব্যাবস্থা করি, চিন্তা করবেন না, আমার কাছে একটা অ্যালার্ম ঘড়ি আছে সেটাতে আপনার ডিপার্চার সময়টা সেট কইরা একটা টানা ঘুম দেন। কোনো অসুবিধা হইবো না, প্রয়োজনে আমি আইসা আপনাদের ঘুম থাইকা উঠায়া দিমু, সারা রাত আমার ডিউটি আছে আজকে। সেই দেশি ভাইয়ের বদান্যতায় আমার বন্ধুটি রিয়াদে বেশ ভালো ভাবেই সেই এগারো ঘন্টা পার করেছিল।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এ আমার ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতা খুব বেশি নাই। শেষ ট্রাভেল করেছিলাম ১৯৯৪ এ জেদ্দা -ঢাকা রুটে; এবার ঢাকা গিয়ে প্ল্যান করলাম সবাই মিলে সিঙ্গাপুর যাবো বিমানে। কিন্তু বৌকে রাজি করতে পারছিলাম না কারণ ইউরোপে দেশটির প্রধান মন্ত্রীর entourage ফ্লাইট এর জরুরি অবতরণ সংক্রান্ত জটিলতা। সিঙ্গাপুর আর মালিন্দো এয়ারলাইন্স এর রিটার্ন কন্ফার্ম না থাকায় বিমানে রাজি হল আর আমিও চাচ্ছিলাম বিমানেই যাবো। কিন্তু এবার ট্রাভেল করতে গিয়ে দেখলাম বিমান ক্রুদের ‘আদতের’ খুব একটা পরিবর্তন হয় নাই এই চব্বিশ বছরে। ১৯৯৪ এর ফ্লাইট এর বেশির ভাগ ছিল মিডল ইস্ট এর ‘লেবার ক্লাস’ যাত্রী এবং এদের কারোর সেফটি জ্ঞান নেই। তো সিট আইলের মাঝখানে লাগেজ দেখে ‘হোঁদল কুৎকুতে’টাইপ এর এক কেবিন ক্রু রেগে বললো, "এই সুটকেস এইখানে কেডা রাখছে? যদি এইডা এখন না সরান, তাইলে কিন্তু জানালা দিয়া ফালাইয়া দিমু"  দুঃখ লাগলো এরা লেবার ক্লাস যাত্রী হলেও শুদ্ধ বাংলাটা অন্তত আশা করতে পারে, ইংরেজিটা না হয় নাই বললো।

১৯৯৪ এ বিমানের সেই ফ্লাইটটির প্রায় অর্ধেক সিট খালি ছিল, আরো লক্ষ্য করলাম, এক সিনিয়র পার্সার প্রথম সারির সিট এ বসে রীতিমতো পড়াশোনা করছেন। জিজ্ঞেস করতে পারিনা সরকারি বিমানের নীল সাদা উর্দি পরে কেন ডিউটি না করে ছাত্র বনে গেলেন। জিজ্ঞেস করলাম, কি পড়ছেন? বললেন, "আর কইয়েন না, কালকে আই সি এম এ  ফিনান্সিয়াল মানাজেমেন্ট এর টার্ম ফাইনাল, কাজের চাপে পড়তে পারি না তাই এই ফ্লাইট এ একটু পড়তাসি"! দেখলাম সেই সিনিয়র পার্সার ওই ফ্লাইটে একটা কাজ করলেন অবশ্য, দুই কেবিন ক্রু এর মধ্যে রীতিমতো ঝগড়া থামালেন। এয়ার হোস্টেস ভদ্রমহিলা তার সহকর্মী এক পার্সার এর কাছে কিছু টাকা পান, সেটা সে এখন ফেরৎ দিতে চাচ্ছেন না, যদিও টাকাটা ওই ফ্লাইটে তার কাছে এখন আছে। এয়ার হোস্টেস ওই ফ্লাইটেই এক প্যাসেঞ্জের এর কাছ থেকে কিছু রিয়াল মার্কেট দর থেকে কিছু কমে কিনবেন, যার জন্য টাকাটা এই মুহূর্তে সেই এয়ার হোস্টেসের দরকার এবং উনি ‘লেবার ক্লাস’ এর সেই প্যাসেঞ্জের কে কনভিন্স করেছেন। পরে সেই প্যাসেঞ্জের কে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, রিয়ালগুলা তো কম দামে বিক্রি করলেন, এয়ার পোর্ট এর ভিতরে তো ব্যাঙ্ক এ বেশি পেতেন। সে বললো, "আফা তো কইলো, এয়ারপোর্ট এ বেচতাম পারুম না কারণ আমার তো পাসপোর্ট নাই..খুরুজ অর্থাৎ এক্সিট কাগজে দেশে ফিরতাছি "। অর্থাৎ বিমান ক্রু রা দেশ সম্পর্কে যাত্রীদের একটা নেতিবাচক ধারণা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিমানের আজকের এই দৈন্যদশা দেখে পুরোনো একটা প্রাকটিক্যাল জোকস মনে পড়লো। পোশাক-আশাকে খুবই সাধারণ  আমার এক বন্ধু নব্বই দশকের শুরুতে মন্ট্রিয়েল থেকে ঢাকা গিয়ে আমাকে বললো, চল মতিঝিলের বলাকা ভবনে বিমান অফিসে যাবো। উদ্দেশ্য বন্ধুটি চট্টগ্রাম যাবে বিমানে। যথারীতি কাউন্টার থেকে বলা হলো, সিট্ নাই। আমার বন্ধু তখন বললো কক্সবাজারের টিকেট দেন, বললো সেটাও নাই। এবার আমার বন্ধু বললো, তাহলে সিঙ্গাপুর অথবা ব্যাংকক হবে কিনা। বলা হলো, খালি নাই। আমার বন্ধুটি তখন বললো, তাহলে আমাকে লন্ডনের একটা টিকেট দেন, লন্ডনেই চলে যাই; তখন বিমানের কর্মীটি বললো, ভাই, আপনি কি ফাজলামো করছেন, আপনার কি ব্রিটিশ ভিসা আছে? দেখতাছেন না আমরা ব্যাস্ত? তখন আমার বন্ধুটি তার কানাডিয়ান পাসপোর্ট দেখিয়ে বলেছিলো, ভাই বিমান এর যেই রুট এ সিট্ খালি আছে সেই রুটেরই একটা টিকেট দেন, তবুও বিমানেই যামু!

এবার বিমানের সিঙ্গাপুর ফ্লাইট এ দেখলাম খাবার মান বেশ উন্নত কিন্তু এবারেও দেখলাম সেই ‘হোঁদল কুৎকুতে’ (এবার পুরুষ পার্সার) খাবার শেষে উচ্ছিষ্ট খাবার, ড্রিংকস, পানি, প্লাস্টিক কাটা চামুচ এগুলো কেবিন ট্রলি তে না নিয়ে সব কিছু একটা ট্রান্সপারেন্ট গার্বেজ বাগে ভরে রীতিমতো টেনে হিচড়ে আইল দিয়ে নিয়ে শেষ সারির তিন ঘুমন্ত আবার সেই ‘লেবার ক্লাস প্যাসেঞ্জের কে উঠিয়ে দিয়ে সেই তিন সিটে ডাম্প করলো। ওয়াশরুম এ যাওয়ার সময় এটা দেখে আমার ফোন এ একটা ছবি তুললে সেই পার্সার বললেন, "স্যার গিটটু দিয়া দিছি, অসুবিধা নাই"; তাকে বললাম, ভাই প্লেনের টেম্পারেচার তো কন্ট্রোল না, পুরো ফ্লাইটই শুরু থেকেই রীতিমতো ঘামছি, এখানে শিশু এবং অনেক রোগী যাত্রী আছেন বলাতে উনি অবশ্য পরে মোটা তার অর্থাৎ ওয়্যার্ড সীল করেন এবং আমাকে দেখালেন। বুঝলাম না গার্বেজ ব্যাগ কিচেন কেবিনেটের নির্ধারিত স্লট এ না রেখে কেন সিটের যাত্রীকে উঠিয়ে দিয়ে ডাম্প করতে হবে, ক্রু দের বিমান নিশ্চয় এটা অন্তত ট্রেইন করতে পারে।

শেষ করবো কেবিন ক্রুদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। গত বছর মে মাসে এমিরেটস এর টরন্টো-দুবাই চৌদ্দ ঘন্টা লং হাউল ফ্লাইট এ স্বভাবতই স্ট্রেস আউট করার জন্য কিচেন এরিয়া তে গিয়ে এক ইতালিয়ান ক্রু কে জিজ্ঞেস করলাম, ঢাকা তে ট্রিপ নাও কিনা। সে বললো, অবশ্যই, "আই লাভ ঢাকা সিটি"। অমি বললাম, তোমরা নিশ্চয় সোনারগাঁও হোটেল থাকো, ওখানে তো প্রচুর রিক্সা এবং ট্রাফিক। সে সাথে সাথে বললো, "আই লাভ রাইডিং রিক্সা ইন হাতিরপুল এরিয়া, ইন ফ্যাক্ট ইটস ভেরি ইকো ফ্রেন্ডলি এন্ড ইট রেডিওসেস, কার্বন এমিশন ইন ঢাকা" । আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, লেবার ক্লাস প্যাসেঞ্জের হওয়া সত্ত্বেও আমার জাত পাত এবং অরিজিন জিজ্ঞেস না করেই একটা শহরের নেতিবাচক বিষয়কে কিভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করল । কারণ এমিরেটস এদের এভাবেই ট্রেইন করেছে তাদের গন্তব্যকে উৎসাহী করতে, কারণ এমিরেটস এর একটা রুট sustain করলে এমিরেটস টিকে যাবে এবং সেই সাথে ক্রুদের চাকরিও টিকে থাকবে।