হাসিনা মমতাজ ডলির কবিতা

লেখক: হাসিনা মমতাজ ডলির Category: কবিতা (Poem) Edition: Dhaboman - Fall 2018

বোধহীন মুক্তি! 

নিজেকে বড়ো বেশী অবোধ মনে হয়

যার কল্পনায় শুধু মঙ্গলের কাব্য রচিত হয়,দিবানিশি। 

অথচ নিজেই অপ্রয়োজনীয় কোনো গল্পের মতো,

যা কখনও পঠিত হয়না আনন্দের সাথে!

এতো ভ্রান্তি ভরা জীবন আমার

যেনো বিষাদের আকাশে ওঠেনা কখনও চাঁদ!

অর্বাচীনের মতো ঘুরে বেড়াই

মনের অলিন্দে কারো কারো,

কেউ রাখেনি খুলে বাতায়ন,ভালোবাসার!

মিথ্যে কুহকিনীর জলাশয়ে ডুবে যাই অহর্নিশি। 

অতঃপর আমি ফিরে আসি ক্লেদক্ত মনের আরশিতে!

মিথ্যে মায়া,মিথ্যে সাজানো জীবন

আমি খুঁজে বেড়াই তপ্ত আকাশে এক পশলা বরিষণ!

আমি অকপটে বুঝে নিতে পারি,

মানুষের ভিতরের মানুষটিকে,

হয়তো ঐন্দ্রজালিক কোন আলোয় দিগভ্রান্ত হই,

প্রভাতের আলোয় দেখি গহীন রাতের ছায়া-----

মিথ্যে কাছে আসা,মিথ্যে সব মায়া!

অভিমানের গভীরে যেতে যেতে ভাবি

ফিরে যাই এবার,হয়তো একদিন জলের মাঝে ভেসে থেকে জলজ শ্যাওলা হয়ে যাবো,

কোনদিন জোছনার দুয়ার খুলে কেউ ভেজাবে না আমায়!

অপূর্ণতার তীব্র আলিঙ্গনে,

নীল পদ্মের মতো বিষাদের সাগরে ডুবে গিয়ে

হয়তো মুক্তি মিলবে আমার,

তারপরও জাগতিক মায়া আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আমি দিগভ্রান্ত হই।

অমিয়ধারার সুরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে,

ভালোবাসাহীন কষ্টবোধ থেকে চিরতরে মুক্তিরমিছিলে

একদিন পা বাড়াবো আমি,

এবং সাথে আমার নিভৃতচারী সত্তাও।

 

নক্ষত্রের মতো জেগে থাকে ভালোবাসা

ভালোবাসার মেঘেরা উড়ে উড়ে যায়
সুনীল আকাশে,মেঘ বালিকার মতো!
অভিমানী হয়ে যখন বৃষ্টি ঝরায় পৃথিবীর বুকে,
শ্রাবণের অকাল বর্ষণে তোমাকে সিক্ত করে অবিরাম,
প্রনয়ী,জেনে রেখো ভালোবাসা তোমাতেই ভেসে যায় সেই শ্রাবণ জলের স্রোতে।

কখনো যদি বৈশাখী আকাশ,
ঝড়ের রুদ্রবীণায় তোলপাড় করে পৃথিবী,
শ্বেত কপোতেরা ওড়ে ভীরু ডানায়, 
এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া বয়
প্রনয়ী,জেনে রেখো ভালোবাসা খোঁজে তোমাকে, 
অসীম নির্ভরতায়।

রাতের নিঝুম প্রহর শেষে,
পূব আকাশে আবীর রাঙানো সদ্য ভোরের আভাস,
হঠাৎ যেনো, রাত জাগানিয়া ক্লান্ত মনের ছায়ায়,
তুমি এসে দাড়াও পূর্ণ অবয়বে,
প্রনয়ী, জেনে রেখো, তোমাকে ভোলা কি যায় কখনও!

শীতের শিশিরে ভেজা ঘাসফুলে কিংবা হলদে সর্ষে ক্ষেতে,
একটু উষ্ণতা খোঁজা খয়েরী শালিক,
ঠোঁটে তুলে নেয় খড়কুটো,গড়ে নেয় ভালোবাসার ছাউনি,
ঠিক তেমনি, 
তোমার ভালোবাসার আচ্ছাদনে যাপিত জীবন,
কেটে যাক অনাদি কাল,
রঙ বদলে যাক পৃথিবীর,সময় বয়ে যাক অনন্তকাল,
প্রনয়ী,জেনে রেখো,ভালোবাসা বদলায় না,
নক্ষত্রের আলোর মতো আলোকিত হয়ে থাকে হৃদয়ে।।

 

জন্মান্তর!

যদি জন্মান্তর হয় কখনো
ছোট্ট একটা ধূসর চড়ুইপাখি হয়ে উড়তে চাই,
বেহিসাবি আকাশ জুড়ে ডানা মেলতে চাই,
অনির্বাণ! অনন্ত সময় কাল!
হোকনা আকাশ তখন রোদজ্বলা কিংবা মেঘে মেঘে টান টান,
আমি ডানা মেলবো, আকাশের পরে আকাশ ছুঁয়ে
ক্লান্তিহীন অদম্য ভালোলাগায়------
বহুকাল জানালা গলিয়ে ফ্রেমে বাধা আকাশটা দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি!
প্রতিমুহূর্তে পাখী হয়ে উড়বার সাধ ছিলো যে নিভৃতে, মননে! সময় এসেছে আজ।
মানুষ নয়,স্বাধীনতার সুখ নিয়ে এ জন্মে
ছোট্ট একটা পাখী হতে চাই।

যদি জন্মান্তরে আবারও ফিরে আসি
পৃথিবীর আলোছায়ায় -----
শিশিরভেজা ঘাসফুল হয়ে ফুটতে চাই,সেই মেঠো পথটার পাশে ----
সুগন্ধ নাইবা ছড়ালাম,তোমাদের সাজানো সভ্যতার
ভাঁজে ভাঁজে,কিংবা গোপন আঁধারের মাঝে --
বুনোফুলের সৌন্দর্যে বিমূর্ত হয়ে রবে কেবল ভোরের পাখ-পাখালি!
অবারিত নিকুঞ্জবনে সুবাস ছড়ায়ে মুগ্ধতায় ভরাবো আমি, অরন্যের দিনরাত্রি।

যদি জন্মান্তর হয় শ্রাবণের কোনো এক ঘনঘোর বরিষণে ------
টিনের চালে রিমঝিম সংগীতের তালে তালে,
ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে
ফিরে আসি যেনো সে মায়েরই কোলে----
মমতায় জড়িয়ে আছে যে আমার সমস্ত জীবন
নির্ভরতার পরম আশ্বাসে।।

 

জীবনের সাতকাহন!

পোড়ায় মন দীর্ঘশ্বাসের নিঃশব্দ অনল,মাঝখানে অনন্তকাল!
পাশাপাশি তুমি- আমি,
তবুও যেনো কত নিঃসঙ্গ প্রহর কেটে যায় অবলীলায়!
নীরবতার সুতোয় বোনা জীবনের সব গল্প,
অথচ কতো কাছাকাছি জীবন বয়ে যায় আমাদের!
ভালোবাসাও যেনো শব্দহীন প্রপাত,
আটকে আছে মৃত গহ্বরে,কোন একদিন ঝরনাধারায় বইবে কলকল সুরে,
স্পর্শেন্দ্রিয় সুখের বাতাস হৃদয় ছুঁয়ে যাবে,
অপেক্ষারা প্রজাপতির মতো উড়ে শূন্য বাগানে,
ফুল ফুটবে হয়তো কোনো নতুন ফাগুনদিনে!

হয়তো আশার বসতি হবে কোন চৈত্রের খরায়!
ঝুম বরষায় পোড়াবে না আর হৃদয়, হয়তো-------!!!

এখন শুধু নীরব দহন চারপাশ জুড়ে,
মন খারাপের তীব্র ঝড়ের আভাষ,
ভালো নেই মন,
কবিতার আকাশে উড়ে কেবলই সোনালি শকুন,
নিত্যদিন ব্যবচ্ছেদ করে আমার ভালোবাসার শব্দের পদাবলি,
ধারালো ঠোঁটের কষাঘাতে!

অথচ আমাদের জীবনযাপন একই আকাশের নীচে,
একই অন্দরমহলে,
তবুও দীর্ঘ দিন-রাত্রি আমরা অচেনাই রয়ে গেলাম,
দীঘল সময়ের বাহুডোরে নিজেদের সমর্পিত করে
হায়রে জীবন! শুধুই কি নিয়মেের বেড়াজালে বন্দী
কিছুটা সময়ক্ষেপণ!
মাঝখানে কেবলয়ই রয়ে যায় অদৃশ্য কাঁটাতারের প্রাচীর,
যা অলঙ্ঘনীয় মৃত্যুর মতো নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে।।