মেহরাব রহমানের কবিতাগুচ্ছ

লেখক: মেহরাব রহমান Category: কবিতা (Poem) Edition: Dhaboman - Fall 2018

চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা, সাগর বেষ্টিত মোহনীয় প্রকৃতির মাঝে কবি মেহরাব রহমানের জন্ম । কবির বিশ্বাস কবিতার প্রধান উপাদান ভালোবাসা । মানুষের জন্য,  ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল সৃষ্টির জন্য । একটি সুস্থ, সুন্দর ও নির্মল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর মধ্যে গড়ে উঠেছে কবির অমিয় জগৎ । তিনি যখন নবম শ্রেণীতে পড়েন তখন তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় নবারুণ নামের সাহিত্য পত্রিকায় । সম্পাদক ছিলেন তাঁর এক প্রতিভাবান বন্ধু দুলাল বিশ্বাস । সেই থেকে কবির কবিতা লেখার এই অনন্ত যাত্রা । 
কবিতা ছাড়াও তিনি ছড়া, ছোটগল্প, গান ও কলাম লিখে থাকেন। কবিতা, গল্প, কলাম ও সম্পাদিত গ্রন্থ সহ মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫ টি I মেহরাব রহমান একজন দক্ষ অভিনেতাও বটে । তিনি এক যুগের অধিক সময় ধরে ক্যানাডার নাগরিক হিসাবে স্ত্রী জাহানারা চিনু এবং পুত্র অভীক রহমান সহ টরন্টো শহরে বসবাস করছেন । প্রচার বিমুখ, নিভৃতচারি এই কবি প্রবাসের শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও  নিরন্তর কলমযুদ্ধ করে যাচ্ছেন, যদি তাঁর শেষ যাত্রার আগের মুহূর্তেও রেখে যেতে পারেন যুদ্ধ নামক মহা ব্যাধির মহৌষধ ।

 

অনুর ভিতর পরমাণু

 

l

ক্ষুধার্ত আমি 

কোথা পাই ভাঙাচাঁদ ঝলসানো রুটি ?

উত্তপ্ত আগুন রোদে 

হেঁটে যাচ্ছি

পূব  থেকে পশ্চিমে ।

সঙ্গে সম্পন্ন সাথী ,

অন্তরে সুগন্ধি আতর মাখা ।

কাছে কাছে

নিকট  নিকটতম কাছে

অনন্ত বসবাস তার ।  

 

l

আমাদের

সকলের

ভেতর ঘর

এক দুঃখ নগর

এবং শেষহীন

এক আনন্দ শহর

এরপর সাজানো স্বপ্নসুখ

তারপর জংধরা সিন্দুক

যন্ত্রণার অসুখ

স্মৃতির ছায়া

হঠাৎ কাঁদে ঝড়ের রাতে

আনন্দ সংগীত বাজে

যেকোনও প্রভাতে

উজান ভাটার অবাক নদী

জীবন চলতে চলতে

থেমে যায় যদি  

প্রচন্ড ঝড়ের পর

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়

আবারকি উদিত হবে ?

কে জানে ?

 

l

একটু একটু শীত বোধ

একটু একটু অন্ধকার

আনন্দ অচিরাৎ

কি মধ্যিরাত

কি মধ্যদুপুর

খরায় পোড়া সুখজমিন

বিষন্নপাহাড়

একটু একটু প্রেম 

একটু একটু দ্বিধাচুম্বন

এইতো যাপিত জীবন

একটু একটু ভুল শব্দ প্রক্ষেপন

মানবিক আদালতের

কাঠগড়ায় নতমুখ-আসামী

এরপর রুদ্ধদ্বার লৌহকপাট

একটু একটু অন্তহীন অন্ধকার

তারপর আবার সেই বিনম্র  মুগ্ধ সকাল

চায়ের টেবিল, বাতিল টোস্টারের

পোড়খাওয়া রুটি, সদ্য ব্রিউ করা ইটালিয়ান

বিন থেকে প্রস্তুত রঙিন পিয়ালায়

কালো কফি

সঙ্গে প্রাসঙ্গিক

মানবেন্দ্রের অতুল কণ্ঠের

নজরুল সঙ্গীত

তখন খুব অভ্যন্তরে অনুভূত হয়

ভাসমান এক সৌরমণ্ডল

সেখানে একটু একটু রোদ

একটু একটু সিঁদুরে মেঘ

একটু একটু অভিমান

হঠাৎ বৃষ্টি

একটু একটু তৃষ্ণা জল

খরস্রোতা উন্মাদ সমুদ্দুর 

সোঁদা গন্ধময় পলিমাটি ঘর ,বাবার কবর

সেই কবে ফেলে আসা প্রেম

অন্তর্দাহে দাহ্য অদৃশ্য ফ্রেম

পূর্ণ চাঁদ থেকে গড়িয়ে নেমে আসে

একটু একটু আলোর কণা

একটু একটু জোসনা 

একটু একটু

জমতে জমতে

জমতে জমতে

অফুরান জোসনা-প্রপাত  

এভাবেই  আলোকবর্তিকার

অঝর ধারার সাথে

শেষহীন ছুটে চলা   

 

 ৪

হেমন্তের নবীন কুয়াশা মাড়িয়ে হাঁটি

অচেনা বৈদেশ মাটি I

হঠাৎ চমকে উঠি

ভোরের কাক ডাকে ;

কা-কা-কা কা-কা-কা

সানি ধাপা মাগা রেসা

বিষাদ কণ্ঠস্বর অনেকটা খাদে ;

বুকের কিনারে জাগে ভূমিকম্প-বিস্ময় ;

ঝোড়ো হাওয়া বয় ; আগ্নেয়গিরি-কম্পন I

বিমূর্ত কালো কাকটা মূর্ত হয় মুহূর্তে

কা-কা-কা কা-কা-কা l

উড়ে যায় এক গাছ থেকে অন্য গাছে 

পরদেশ থেকে

যাপিত জীবনের জাহাজ ভিড়ে

স্বদেশের বন্দরে l

আহা সেই শীতের সকাল,

ভোরের আনন্দকাক আমার পরম বন্ধু

আমার শৈশব, কৈশোর. যৌবন

সেই নন্দিত হাওয়া উড়ে উজানে l

সোনারং ধুলো উড়ে ;

তরুণ ঢাকার বুকের

 

উপর দিয়ে দৌড়ে চলে ঘোড়ার গাড়ি l

ঘোড়ার খুরের শব্দ

খটাং খটাং খট 

খটাং খটাং খট 

আজও যেকোনও নিভৃত সন্ধ্যায়

কিংবা একান্ত দিবালোকে  

রোমাঞ্চ জাগায় অন্তর্মহলে l

নগরায়ন, বিশ্বায়ন কেড়ে নিয়ে গেছে সব

ঘষা কাচের ওপারে; দূরে বহু দূরে l

আমাদের পায়ে পায়ে বেড়ি ;

কতবার কারাগার ভেঙে

উড়তে চেয়েছি মুক্ত আকাশে ;

ডানা ভেঙে বারবার পড়ে গেছি ভূমিতে I

একদিন নিশ্চয়ই ভরা পূর্ণিমায়

নীলজোসনায় নীলাভ রাত্রিতে

অথবা উজ্জ্বল সূর্যদিনে

রূপবতী রুপালি আলোর ঝর্ণায়

ফিরে যাবো নতজানু হয়ে

চির চেনা উৎসে আমার ;

শূন্যে-শূন্যে-শূন্যে-মহাশূন্যে I    

 

নীল বিষ নীল অজগর 

 

ভেতরে পুড়ছে সব,

রঙিন রুপকথা,

অপূর্ব আকাশ । 

পুড়ছে পোড় খাওয়া রদ্দুর 

গনগনে আগুন কয়লা । 

অন্ধ অন্ধকার 

গিলে খাচ্ছে চারিদিক;

ভয়ঙ্কর এই কান্না । 

নীল বিষ নীল অজগর

কামড়ে ধরে সভ্যতা । 

রোম পোড়ে; 

কাঁদে রোম নগর । 

সম্রাট নিরো তখনও বাঁশি বাজায়। 

পৃথিবীর নিরোরা এভাবেই গান গায় ।

কেন এমন হয়?

কেন সপ্ন ভঙ্গুর?

কেন বং থেকে বাঙলা,

বাংলাদেশ এবং 

ব্যাপক বিশ্ব আজ ভাংচুর

রাগান্বিত প্রকৃতি ব্যাথাতুর,

ভীষণ নীরব, বধির l

কান পেতে শোনো 

ইতিহাস কথা বলে।  

একদিন অরণ্য ছিল 

নবজাত শিশু। 

অভেদ্য অন্ধকার 

ছিল অসূর্যম্পশ্যা,

ছিল ক্ষুব্ধ চরাচর, অথৈ জলরাশি

এবং উন্মাদ সমুদ্দুর।

ঝড় বহে

বহে ঝড়।  

জাগেনি প্রেম,

জ্বলেনি অলৌকিক আলোকবর্তিকা । 

প্রাচীন মানবকুল। 

ধর্মপ্রচারক তখনও আসেনি ধর্ম প্রচারে। 

বাঁচার জন্য পাথরে পাথরে ঘর্ষণ;

সৃজিত আগুন। 

আগুন প্রেমে মত্ত লোকেরা অগ্নি—উপাসক ।

বিবর্তন,পরিবর্তনে জেগে ওঠে কৃষ্ণ গহ্ববর  l

নানা ঢঙে,নানা রঙে

নানা মাত্রার উপাসনা l

পাহাড়, নদী, ফুল, অরণ্য কথা বলে ;

ক্রমশ: মানুষ মানবিক হয়ে ওঠে ;

য্যানবা শুক্লপক্ষের পূর্ণিমার চাঁদ ।

সেই সম্বৃদ্ধ ইতিহাস

আজ পুরানো সংবাদ l

 

সেই সম্পন্ন সময় থেকে বাকী সব ঠিকঠাক ;

চিলেকোঠার ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ, বিস্তীর্ণ মাঠ, বৃক্ষরাজি,উদার আকাশ,ঋতুচক্র, ইত্যাদি ইত্যাদি l

বিশ্ব প্রকৃতির নিজস্ব উপাসনালয়ে

মন্ত্র বাজে সুমুধুর লয়ে

সুখং স্বর্গং নিবাসং l

 

হায়! কেবল ক্লান্ত, অবসন্ন ,

ক্ষয়িত মানুষেরা বোঝেনা এতসব l

তাই এখন ভয়ার্ত নগর

স্তম্ভিত বন্দর, স্তব্ধ গ্রাম ;

উপরে বেদনার্ত মেঘ ভাসে

দুঃখ ঝরে অবিশ্রাম

বাজেনা আর আনন্দ ড্রাম l

সব সঙ্গীত থেমে গেছে কার ইঙ্গিতে ?        

 

ভ্রষ্ট সমাজ l

নষ্টবীজ l

পতাকার পবিত্র পদতলে

ওঁৎ পেতে বসে থাকে

হিংশ্র হন্তারক l 

বিদগ্ধ পন্ডিতের খুন ঝরে

হঠাৎ মৃত্যুর কালোহাত

কেড়ে নেয় মানব জীবন l

কত নাম, নামের মিছিল l

কষ্টগুলো জ্বলতে জ্বলতে দূর বাতিঘর l

রোম পোড়ে

কাঁদে রোম নগর;

সম্রাট নিরো তখনও বাঁশি বজায় l

পৃথিবীর নিরোরা এভাবেই গান গায় l 

 

তথাপি অরণ্য অন্ধকারেও 

আলোর নাচন পাতায় পাতায় l

ঐযে ঘাসফুল , ঘাসপোকা , জেগে আছে  সারারাত l রাত্রি  গভীর ;

ঝিঁ ঝিঁরা গান গায় 

দরবারি কানাড়ায় l

ঐযে নাচ ময়ুরী ঝাঁকেঝাঁকে 

কারুকাজ পাখা মেলে 

দলেদলে নাচে l

ঐযে দিগন্তে গোধূলি বেলায়

সন্ধ্যারাগে রাগিনী বাজে l

সূর্য  থেকে  গোলে  গোলে  পড়ে 

বেলা শেষের আবিরের  রং l

এইখানে আলবাট্রস ,গাঙচিল ,

ধবল বক পাড়ি দেয় বিজন আকাশ l

ঐখানে সুন্দরবনের সুন্দরী অরণ্যে  

চিতল হরিণীরা খুব চুপিসারে

পুরুষ হরিণদের সাথে 

ভালোবাসাবাসি প্রেমপ্রেম খেলা করে l

ঐযে খরতপ্ত চৈত্র দুপুর

মেঘদেবতা ঝরে অমৃত জল

ঝরে জল টুপটাপ এপিটাফ l

"জল পড়ে পাতা নড়ে

 জল পরে পাতা নড়ে" l 

এরকম সুন্দর

জলতরঙ্গের মাঝেও

আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি

এক কঠিন শিলা খণ্ডের উপর l

তবেকি আমাদের ভীষণ অসুখ ?

 

বর্তমান এক শূন্য, মহাশূন্য l

আমি এক যোগী পুরোহিত ;

আমার রক্তে প্রবাহিত নুরুলদীন

"নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়

যখন শকুন নেমে আসে

এই সোনার বাংলায় l  

নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়

যখন আমারই দেশে আমার

দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়

ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় " l

 

ঐযে, ঐযে আবার মাদল বাজে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ l   

 

কৃষ্ণ গহ্বর থেকে জাগছে আবার

নুতন সকাল l

এমন সোনালী রোদ্দুর

এমন সোনাঝরা দিন

ভোরের পাখির গান, নবরাগ ভৈরবী তান,

নীল বিষ নীল অজগর, ক্ষুব্ধ আগুন কয়লা,

অন্ধ অন্ধকার, ভ্রষ্ট সমাজ,

নষ্টবীজ এতসব দুঃখ হবে অবসান l  

 

অনির্বাণ উৎসবদিন আজ l

এসো আমরা যূপকাষ্ঠে বলি দেই

আরণ্যক আগ্রাসন l 

হাতে হাত রাখো ;

সূর্য সাক্ষী থাকে l

 

এসো নিষেধাজ্ঞা জারি করি

সকল অপ্রেম, বিকলাঙ্গ ধর্মের ওপর l

 

এসো সব কাগুজে ধর্মের মিথ্যা লেবাস

চিতার আগুনে পড়াই l   

 

এসো নিষিদ্ধ ঘোষণা করি

নষ্ট হাতে দুষ্ট তরবারি l 

এসো আজ নির্বাসন দেই

সমুদ্র -গভীর অতলান্তে

ঘুণেধরা, ঘুণপোকা পূর্ব সমাজ l     

চলো সবে উচ্চকন্ঠে বলি

পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী

'ভালবাসা নগর'; বলো আমরা

আবার ভালবাসবো l

বলো সবে,

আমি ভালবাসি আলোর ভূবন

আমি ভালবাসি বিপন্ন মানুষ

আমি ভালবাসি ধানসিড়ি নদী ,

নলখাগড়ার বন, অরণ্যের

বিস্তীর্ণ অধিবাসি, এবং এবং এবং

আমি ভালোবাসি পোকামাকড়ের বসতবাড়ি,

সোনালি ডানার চিল,

বিশ্ব -প্রকৃতির অপরূপ রূপ, জোস্না রাতে

জোনাকির জোনাকজ্বলা প্রেম,

আরণ্যক মার্গিয় সংগীত ল

ঐযে আসামের পাহাড়িয়া ঢল নামে;

হিমালয়ের বুক চিরে নেমে আসে

ব্রহ্মপুত্র নদ; নুতন জোয়ারের জলোচ্ছাস;

ভূপেন হাজারিকার হৃদপিণ্ডের রক্তক্ষরণ;

সেই অতুল কণ্ঠের দীপ্ত উচ্চারণ, ঘুম ভাঙানিয়া গান

প্রেম জাগানিয়া বান ,

"মানুষ মানুষের জন্যে

জীবন জীবনের জন্যে" l 

 

মানুষের জন্যে অসম্ভব প্রেম নিয়ে

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিয়ে

এসো আমরা জেগে উঠি আরবার l  

 

ঐখানে দূর গ্রাম

গ্রামের ভেতরে গ্রাম

গ্রামের ভেতরে গ্রাম

গ্রামের পরে গ্রাম

তারপর আনন্দধাম; মহাবিশ্বের রাজধানি

আমাদের ভালোবাসা নগর l

একদিন ঝুম বৃষ্টি নামবে l

উদিত হবে নূতন সূর্য, নূতন ভোরে ;

নব অনুরাগে l 

ভয়ার্ত নীল বিষ নীল আজগর

ভাঙতে ভাঙতে

পালাতে পালাতে অবসন্ন মমি হয়ে

শুয়ে রবে

দ্বাররুদ্ধ মনুমেন্টের বদ্ধ দেরাজে l  

 

সোনার সিন্দুক

 

কিচিরমিচির পাখিডাকা ভোর

ধীরলয়ে প্রবাহিত জীবনকোলাহল

জাগছে নীলাম্বর নীল আনন্দবিষ

আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান

ঐযে ঐখানে শুয়ে আছে বিলুপ্ত নগর

বিস্ময়কর চাঁদ চন্দ্রিমা;

স্বপ্নের ভেতর স্বপ্নঘর

ঘরের ভেতর সোনার সিন্দুক

তালাচাবি আঁটা আমার পদ্মফুল অন্তর

স্মৃতির দেরাজে এইমাত্র তুলে রেখেছি বিম্বিত

এক অতিপ্রাকৃতিক শহর

স্বপ্ন বিচ্ছেদ ছিল 

তাই হয়তো চাঁদেরকণার সাথে

জেগেছি রাতভর

এখন পরিষ্কার আকাশ

ঝুলবারান্দার অবকাশ

সোনালী সকাল

এককাপ স্বর্ণাভ চা

চুমুকে চুমুকে মাতাল 

আমি এক আকণ্ঠ মদ্যপ

বিভক্তি বিভাজনে

খুচরো পয়সার মতো

ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া মনটাকে

এই অমৃত চায়ের জল  

আবার তুলে নিলো বুকপকেটে

এখন করটির ভেতর উন্মাদনা

খেলা করে এক অধরা দিবস

অতএব এবং অথবা এবং

এবং এবং এবং

ও আমার প্রিয়

সঙ্গে চাই

কড়কড়ে মচমচে গনগনে

এইমাত্র আগুনে ঝলসানো

পোড় খাওয়া

নতজানু প্রার্থনা,উপাসনা

কিংবা পূজার অর্ঘ্য

অপূর্ব যা পূর্বে কখনও ঘটেনি

তেমনি শেষবারের মত

দগ্ধ,তপ্ত,অম্লমধুর

দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ

সত্যিকার চুমুর মত চুম্বন

আমি চাই প্রিয় নীলয় গহণে

এঁকে দাও তুমি

রক্তজবা ক্ষত চিহ্ন

ক্ষতিকি ভেসে যাব আমি

ঘনো কালো গাঢ় অন্ধকারে

হতে পারে মেঘে ঢাকা আকাশ

তবুও আমি মহাশূণ্যে 

আলোর মেলায়

তোমাকে নিয়ে ভাসবো

আরবার বারবার

যখন তুমি নীলাম্বর নীলবিষ

সোনালী সকাল

পাখিডাকা ভোর

বিস্ময়কর সোনার সিন্দুক

যখন তুমি নিমগ্ন প্রার্থনায়

এঁকে দেবে আমার খুব গাঢ় অন্ধকারে

রক্তজবা চুম্বন

তখন চুমুকে চুমুকে মাতাল আমি 

আমি এক মদ্যপ

তোমাকে সহ আকণ্ঠ পান করবো

দীর্ঘ দীর্ঘ একটি সুদীর্ঘ সুবর্ণ সকাল

 

 

মেহরাব ভাইয়ের সাথে পরিচয় এক যুগের বেশীই হবে। টরন্টোতে। তার কবিতা ভালো লাগে। কবি হিসাবে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে তার অবস্থান কোথায় সেটা নির্ধারণ করবার যোগ্যতা কিংবা অভিপ্রায় কোনটাই আমার নেই, কিন্তু এইটুকু নির্দ্বিধায় বলতে পারি, শুধু কবিতা নয়, যে কোন ধরনের শিল্পের প্রতি তার যে অনুরাগ, ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা দেখেছি তা অসাধারণ। ব্যাক্তিগতভাবে আমি শিল্পীকে দেখতে চাই তার শিল্পীস্বত্তার উর্ধে, একজন মানুষ হিসাবে প্রথম। সেই পরীক্ষায় মেহরাব ভাই উত্তীর্ণ হয়েছেন সাবলীলতায়। যেটুকু তাকে চিনেছি, তিনি একজন চমৎকার, নিষ্ঠাবান মানুষ। তার দীর্ঘ, সফল এবং সুস্থ জীবন কামনা করি।   

প্রধান সম্পাদক