ছিনতাইকারীর মহত্ব!

Writer: Ahsan Ali Category: বাস্তব থেকে নেয়া (Anecdote) Edition: Dhaboman - Winter 2017

ছিনতাইকারীর মহত্ব!

 

 বুয়েটে পড়াশুনা করবার সময় অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেশ কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলাম। পরিস্থিতি আতঙ্কজনক হলেও মাঝে মাঝে তার মধ্যেও অল্প বিস্তর আনন্দের খোরাক থাকতে পারে। তেমন একটা ঘটনা বলি আজকে। এটি আমার বন্ধু লিজুর অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া।

খুব সম্ভবত ১৯৯৩ সন।  আমরা মনে হয় তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আমার অন্যতম ঘনিষ্ট বন্ধু মিজানুর রাশিদ লিজু (বর্তমানে সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার কোনো বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক) অনেক শখ করে একটা ব্লেজার কিনলো। কোনো এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে পরে যাবে। নতুন ব্লেজার এর বোতাম গুলো ছিল খুবই সাধারণ।  সুতরাং আমরা কয়েকজন মিলে চলে গেলাম রমনা ভবন, উদ্দেশ্য ব্লেজার এর বোতাম চেঞ্জ করা।   এক্সসেপশনাল বোতাম হতে হবে, অন্তত কিছুটা আর্কিটেকচারাল তো অবশ্যই। হাজার হোক আর বছর দুয়েক পরেই architect হতে যাচ্ছি। ঘন্টা দুয়েক এর ছুটাছুটির পরে বোতাম পছন্দ হলো।   কিন্তু বিপত্তি হলো বোতাম লাগাতে বেশ কয়েকদিন সময়  চাচ্ছে টেইলর। অনেক অনুনয় বিনয় করে রাজি করানো হলো যেন অন্তত যেদিন ওর দাওয়াত সেদিন সকালে পাওয়া যায়।  আমরা ফিরে  এলাম হলে। 

অতঃপর যেদিন ওর দাওয়াত সেদিন সরাসরি লিজু ব্লেজার ডেলিভারি নিয়ে চলে গেলো দাওয়াত খেতে। দাওয়াত ছিল ইত্তেফাক ভবনের উল্টা দিকে একটা কমিউনিটি সেন্টারে।  দাওয়াত খেয়ে শেষ বিকেলে লিজু একটা অটো রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিলো হল এর দিকে।  অটো রিকশা দৈনিক বাংলা মোড়ে এসে বায়তুল  মোকাররমের দিকে ঘুরতেই একটু স্লো হয়ে গেলো এবং একজন অপরিচিত যুবক লাফ দিয়ে উঠে লিজুর পাশে বসলো এবং একটা পিস্তল তার পেটের মধ্যে ঠেকালো।  

ছিনতাইকারী : "ভাই আপনি কি করেন? "

লিজু: "আমি ভাই ছাত্র।"

ছিনতাইকারী : "ও... আপনাকে তো দেখতে ব্যাবসায়ী মনে হয়।  তা কোথাকার ছাত্র? ঢাকা ইউনিভার্সিটি?"

লিজু: "না ভাই.. আমি বুয়েটে পড়ি।"

ছিনতাইকারী : "ও আচ্ছা।  তাহলে তো পিস্তল দরকার নাই।  ছুরিই যথেষ্ট।"

বলেই ছিনতাইকারী পিস্তল পকেটে ঢুকিয়ে অন্য পকেট থেকে একটা ছোট ছুরি বের করে ধরলো। বুয়েট এর ছাত্রদের বোধহয় নিরীহ এবং পড়ুয়া বলে বিশেষ দূর্নাম ছিল। লিজুর অহমিকায় লাগলেও সে কোন উচ্চবাচ্য করল না।

এরপরে ছিনতাইকারী টাকা চেয়ে বসলো। যা ছিল সব নিয়ে নিলো।  টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার ও করলো।  বিশেষ বিপদে পড়ে ছিনতাই করতে বেরিয়েছে। বোনের চিকিৎসা কিংবা ঐ জাতীয় কিছু একটার কারণে তার নাকি অর্থের খুবই প্রয়জোন। ইত্যাদি ইত্যাদি। লিজু তার একটা কথাও বিশ্বাস করে নি। সে শুধু মনে মনে ভাবছে, যা নেবার নিয়ে আমাকে ছেড়ে দে ভাই।

ছিনতাইকারী ড্রাইভারকে অটো রিক্সা থামাতে বলল। বেরিয়ে যাবার ঠিক আগে তার চোখ পড়লো লিজুর ব্লেজারের উপরে। সেটা তার চাই। অনেক অনুনয় বিনয় করেও তাকে বিরত করা গেলো না।  ধমক এবং হুমকির মুখে  ব্লেজারটা শেষমেশ দিয়েই দিতে হলো।  অনেক শখের ব্লেজার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরতে পারলো। তবে ছিনতাইকারী যুবকটি বিদায় নেবার আগে একটি মহৎ কাজ করল।  সে তার নিজের সাদা মাটা ব্লেজারটা খুলে জোর করেই লিজুকে দিয়ে গেল। হাজার হোক শীত কাল, ঠান্ডা-ফান্ডা লেগে লিজুর শরীর খারাপ হয়ে যাক এটা সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না।  

আহসান আলী 

টরন্টো, কানাডা