Two Poems

Writer: Lutful Hossain Category: কবিতা (Poem) Edition: Dhaboman - Fall 2017

স্মৃতির আসমান সাঁতারু অভিমান

 

বাঁ বুকের পকেট থেকে
ভাঁজ খুলে চিঠিটাকে মেলতেই
ঝুপঝাপ লাফিয়ে বেরুলো
ডজন তিনেক নীল রঙের শব্দ।
ঠিক হাত ফসকে ছিটকে পড়া
ক’খানা ছুটন্ত মুড়ি-মুড়কির মতো।
সেই ছত্রিশ শব্দে গভীর বোনা ছিল
বলা না বলা প্রায় শতেক অভিযোগ।

অকস্মাৎ তিরিশ বছর পর
কোন মলাটের ভেতর থেকে
পুরোনো সেই চিঠিটা আজ
বেরিয়ে এলো হঠাৎ আবার।
তাকে ঘিরেই ভাবনা চিন্তা
একঝাঁক চঞ্চল পাখির মতোন
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে করোটিতে
উড়তে শুরু করলো দুর্বার।

চারভাঁজের ওই কাগজখানা
থাকে অমনই, হাতে ধরা।
বুকের ভিতর বাতাস জুড়ে
বাজতে থাকে হাজার কথা।
পিয়ানো আর সাক্সোফোনে
মান ভাঙানো স্মৃতির পরম্পরা।

অনন্ত সময় ধরে থাকি, ছুঁয়ে থাকি,
কোষে কোষে নৃত্যরত স্মুতির জোনাকী।
ভুল করেও ভাঁজ খুলিনা চিঠিখানার,
অভিমান টুপ টাপ ঝরে যদি আবার !

 

গাং শালিখ

লুৎফুল হোসেন

 

লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
শহর-নগর ভরা সব মানুষ সমান !

দরাজ দালান আর লাইটপোস্টের
বাগান তোমার কাড়ে নাই একটুও
মন, কাড়ে নাই কারখানা, শ্রমিকের দল,
পার্কের জোড়ামুখ, সাজানো লেকের
পাড়, গ্রীলের গেটে বোনা বোগেনভেলিয়া, নীল
অপরাজিতা, ছাদে ও বারান্দায়
গহনার মতো রাখা দুষ্প্রাপ্য ফুল,
ক্যাকটাস কিংবা সেই সব নাগরিক
সভাসদ, গেলো বছর যারা আইল্যান্ড
মুখর করে লাগিয়েছিলো কৃত্রিম
মার্বেলে আঁকা রংগীন লতা পাতা কুল ।

লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
সড়ক ও নৌপথের দৈর্ঘ্য সমান !

শাপলা শালুক কচুরীরা যেখানে
জলের বুকে স্বপ্ন আঁকে ভীষণ
পাগল করা এক অলৌকিক ঘ্রাণে ।
সন্ধ্যা লাগা ঘাস ও গাছেদের গানে
আঁধার নামলেই জলের বুকে পিঁড়ি
পাতে মন্ত্রমুগ্ধ চাঁদ সন্ধানে ।

ওইখানেই তোমার ঘর, বুকের
ভিতর পৃথিবীর সবটুকু ওম যার ।
ভেঁজা বালির গায়ে রাখা মগ্নতায়
হলুদ ঠোঁটে কসমেটিকসের
প্রলেপ মাখার রংধনু সভায়
নদীজল রোদ মুগ্ধতা এঁকে যায় ।

নিঃসংগ মাচার নীচে গাছেদের
ছায়ারা যেখানে, নিস্তরংগ
জীবনেরে দিয়েছে মোহন হাতছানি,
ঘাসফুল বুনোলতা স্নায়ুবশ ঘ্রাণে বুনি
কিনারে বহতা নদীরে জীবনের
মাঝখানে সখ্যসন্ধানে নিছে টানি ।

সেইখানে নদী ও বিলের গায়ে তুমি
বাঁধো ঘর নরোম মাটির বুক চুমি ।