নীলার চোখে জল

লেখক: জসিম মল্লিক Category: ছোট গল্প (Short Story) Edition: Dhaboman - Fall 2017

তুমি তো বেশ সুন্দর দেখতে!

আজম ঘার ঘুরিয়ে দেখলো রওশন আপা কলল কথাটা। ঘরের মধ্যে গম গম করছে লোকজন। নিচে বেসমেন্টে গান চলছে। উপরে খাওয়া দাওয়ার পাট শেষে গ্রুপে গ্রুপে আড্ডা চলছে। ফটো সেশন হচ্ছে। সব ছবি চলে যাচ্ছে মুহুর্তে ফেসবুকে। কোন এক ফাঁকে রওশন আপা গা ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়েছেন। একটু আগেও তিনি গান গাইছিলেন। রওশন আপা মোটেও ভাল গান না। এটা আজমের ধারনা। আজম গান বিশারদ না হলেও ভাল গলা বা ভাল সুর, সঠিক উচ্চারন চেনে। কারন আজম নিজে একজন গীতিকার। লেখেও ভাল। গদ্য পদ্য দুটোতেই আজম ভাল। তবে আজম লেখালেখি নিয়ে সিরিয়াস না। সিরিয়াস হলে আরো ভাল করতো। আজমের ফোকাস হচ্ছে গান লেখায়।

রওশন আপা দেখতে সুন্দর। সুন্দর বললে ভুল হবে, বেশ সুন্দর। সুন্দর দেখতে বলেই তার একটু দেমাক আছে। নিজে অবশ্য কিছুই করে না। হাসবেন্ড ইউ এন এ চাকরি করে।  মোটা বেতনের চাকরি। রিচমন্ড হিলে আলিশান বাড়িতে থাকে। লেটেষ্ট মডেলের বিএমডব্লিউ চালায় । বড় বড় দুটি মেয়ে আছে। কিন্তু একটু খুকী হয়ে থাকতে পছন্দ করে। হাসবেন্ড বেশীরভাগ সময় থাকে বাইরে বাইরে। তাই যেকোনো পার্টিতে রওশন জাহান আছেই। সবাই ডাকে তাকে। তিনিও না করেন না।

রওশন জাহানের বয়স পঁয়তাল্লিশ হবে। দেখলে আরো কম মনে হয়। দুটি মেয়ে। দুজনেই দেখতে পরীর মত। একজন এ বছর ইউনিভার্সিটিতে গেলো। ছোটোটা ইলেভেন গ্রেডে যাচ্ছে। আজম রওশন আপার বড় মেয়ে তুলিকার সাথে গল্প করছিল।  তুলিকা একটু দুরে সরে যেতেই রওশন এসে আজমের দখল নিয়েছে। তুলিকার সাথে আজই পরিচয় হলো। আজম জানতো না যে তুলিকা  রওশন আপার মেয়ে। আজই জানল।

তুমি কিন্তু সত্যি হ্যান্ডসাম আজম।

রওশন আপার দিকে তাকিয়ে হাসলো আজম।

থ্যাংকস আপা। আমি মোটেও সুন্দর না। ছেলেদের  সুন্দর নিয়ে কে ভাবে। আপনি  অনেক সুন্দর।

সত্যি বলছ!

সবাই আপনাকে সুন্দর বলে ।

সবাই বলা আর তুমি বলা এক হলো!

কেনো বলেন তো। আমি বললে আলাদা কেনো হবে!

ও তুমি বুঝবে না।

আপনি তো আমাকে আগেও দেখেছেন।

তা দেখেছি। কিন্তু ভাল মতো দেখা যাকে বলে সেটা  হয়নি। আজ ভাল মতো খেয়াল করলাম। কি যেন একটা আছে তোমার মধ্যে। তুমি একটু রমনী মোহন।

আরে না আপা। কি বলেন। আলাদা কিছু নাই।

আছে আছে। চেনার জন্য চোখ লাগে।

আজম প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলল, আজকে আপনি খুব ভালো গেয়েছেন। আপনি সত্যি ভাল গান। আজমের প্রশংসা শুনে রওশন আপা যেনো গলে পরলেন। লাল হয়ে গেলেন।

তুমিতো অনেক ভাল গান লেখো। আমর জন্য একটা গান লিখে দাওনা। আমার জন্য শুধু।

আচ্ছা লিখব।

সত্যি বলছ! প্রমিস!

প্রমিস আপা।

কি আপা আপা করছ। শুনতে ভাল লাগে না।

আজম হেসে বলল, কি বলব তাহলে!

রওশন বলবা শুধু রওশন।

যাহ্ কি বলেন। আমি আপনার কত ছোটো!

কত বয়স তোমার!

আন্দাজ করেন কত।

কত আর হবে পঁচিশ ছাব্বিশ!

না। সাতাশ চলছে।

তো। বয়স কে কেয়ার করে আজকাল।

তা করে না কিন্তু মানুষ কি ভাববে বলেন!

মানুষ জানবে নাকি! আমরা বুঝি বন্ধু হতে পারি না! বন্ধুত্বের আবার কোনো বয়স আছে!

কে একজন এসে পড়ায় আলোচনাটা আর এগেুলো না। আজম রওশন  আপার কথায় মনে মনে হাসলো। রওশন আপা এমনই। নাছোড়বান্দা। ওকে রওশন আপা যে  সুন্দর বলছে তাতে খারাপ লাগছে নাতো! প্রশংসা শুনতে কার না ভাল লাগে।

আজম অন্যদের সাথে ভীড়ে গেলো। রওশন আপা দূর থেকে আজমকে লক্ষ্য রাখছে। আজম টের পায়। আজম ইচ্ছে করে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। ছবি তুলছে ঘনিষ্ঠ হয়ে। রওশন আপার চেয়ে ছোটো আর একজনার সাথে গল্প জুড়ে দিল আজম। নীলা। বয়স আটত্রিশের কোঠায়। রওশন আপার মতো সুন্দর না হলেও নীলার শরীরে ভাজ আছে।  সিঙ্গল। আগে থেকেই আজমের পরিচিত। সুন্দর করে সাজতে জানে। রুচি আছে। রওশন আপা যেমন একটু জবর জং সাজগোজ। নীলা তা না। সে নিজেকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তলতে পারে। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।

হাই আজম।

হাই। নীলা আপা। কেমন আছেন। অনেক দিন দেখিনা।

তোমাকেও তো। কোথায় হারিয়েছো!

কোথাও হারাইনাইতো। এই যে আপনার একবারে কাছে।

দুষ্ট। কি করছো আজকাল।

আপা আমি ব্যবসা করছি। চাকরিতে ঢুকেছিলাম। পাশ করার পর ভাল চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার রক্তে আছে বোহেমিয়ানিজম। চাকরি পোষাবে না।

তা ঠিক। কি ব্যবসা করছো!

আমি কম্পিউটার নিয়ে পড়াশুনা করেছি। একটা মিডিয়া হাউজের মতো করেছি। প্রচুর কাজ করছি। আমার সাথে আরো একজন আছে। মেইনস্ট্রীমের কাজই বেশী করছি। চাকরির চেয়ে ভাল নীলা আপা।

বাহ। খুউব ভালতো। তুমি এক কাজ করো। আমার কার্ড রাখো। একদিন আসো অফিসে। আমার সাথে কফি খাও। আমাদের কিছু কাজ তোমাকে দিতে পারি।

সত্যি বলছেন!

হুম।

থ্যাংকস।

আজম শোনো।

বলেন নীলাপু।

তুমি বিয়ে করবে না!

করবো।

কবে করবে!

জানিনা। মেয়ে পাই না।

তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে নিশ্চয়ই!

না নেই।

সত্যি বলছো!

হুম নেই।

কেনো নেই?

তাতো জানি না। কাউকে পাইনি তাই। মেয়ের আকাল।

 

কইছে তোমারে।

সত্যি আপু।

ঢং করো না।

কি ঢং করলাম।

আপু আপু করছো কেনো।

ওহ।

বাসায় এসো একদিন।

আগে বাসা না আগে অফিস!

মাইর দেবো।

তখন যে বললেন অফিসে আসতে। কফির দাওয়াত। বিজনেস দেবেন।

তুমি অনেক দুষ্ট আজম।

আপনি অনেক সুন্দর।

এই বলে আজম কেটে পড়ল। রওশন আপা দুর থেকে কটমট করে তাকাচ্ছে। যেন আজম তার সম্পত্তি। কারো সাথে কথা বলা যাবে না। কোনো এক ফাঁকে আজম হেমায়েতের বাসা থেকে কেটে পড়ল।

২.

কয়েকদি পর। রওশন আপার ফোন।

কি খবর আজম!

ভাল খবর আপা।

আপা বলবা না।

ওকে, রওশন।

গুড বয়।

গুড গার্ল।

তুমি না একটা শয়তান।

তুমি অনেক ভাল রওশন। অনেক সুন্দর দেখতে।

তুমিও সুন্দর।

বল কি বলবা।

কি বলব মানে! এমনি ফোন করছি। প্রতিদিন একবার করে ফোন করবো।

নো ওয়ে রওশন। এই সময় আমি খুউব বিজি থাকি।

আমার গান লিখছ!

হুম।

লিখছ! আর আমাকে কিছু বলছো না!

ঠিকঠাক করে বলবো। একটা রোমান্টিক গান লিখছি।

কবে আসবা!

কোথায়!

বাসায় আসো। গানটা দেখি।

বাসায় না। তুমি কোথাও আসো। কোনো  টীম হর্টনসে।

মানে কি! বাসায় আসো। সকালের দিকে আসো। ওরা ওইসময় স্কুলে থাকে।

শোনো। তোমার মেয়ে তুলিকা তোমার মতো সুন্দর হইছে।

থ্যাংকস। কিন্তু  হঠাৎ তুলিকার প্রসঙ্গ কেনো।

এমনি।

ওর সাথে কি তোমার কথা হয়!

নাহ। ওইদিনই প্রথম প্রথম পরিচয় হলো হেমায়েতের বাসায়।

ওহ। তুলিকার দিকে মন না দিয়ে আমার দিকে মন দাও।

আচ্ছা।

কবে আসছো!

কাল আসি!

আচ্ছা আসো।

কয়টায়!

এগারোটার দিকে আসো।

ঠিক সময় আজম রওশনের বাসায় পৌঁছলো। সুন্দর ঝকঝকে সাজানো বাসা। মন ভাল হয়ে যায়। আজম থাকে মার্টন রোডে। ওর বাসা থেকে প্রায় একঘন্টার ড্রাইভ। ওরা দু’বন্ধু একটা কন্ডো ভাড়া নিয়ে থাকে। সুন্দর কন্ডো। আজমের অফিস ডাউন টাউনে। আজম মেইনস্ট্রীমে কাজ করে তাই ডাউনটাউনে অফিস নিয়েছে। ব্লোর স্ট্রিীটে। আজম একটা নতুন গাড়ি চালায়। ভক্সওয়াগন। জেটা। লেটেষ্ট মডেল।

রওশনদের এদিকটা খুব সুনসান। উইকডেজ বলে এই সময় আরো নীরব হয়ে আছে।  ভুতুড়ে নীরবতা যাকে বলে! রওশন ঘরের কাপড়ে আছে। রিলাক্স মুডে বোঝা যাচ্ছে। রওশন সুন্দরী, বন্ধুবৎসল কিন্তু তার মধ্যে কোথায় যেনো একটা কাঠিন্য আছে। মিষ্টতারও অভাব আছে। এটা আজমের মনে হয়। আজম যে রওশনের প্রতি খুব আকৃষ্ট তা না। জাষ্ট একটা খেলার মতো ব্যপারটা। দেখা যাক না রওশন কতদূর যেতে পারে। কতদূর যেতে চায়। আজমের তো সমস্যা নাই। সে মুক্ত মানুষ।

তোমার বাসাটা সুন্দর রওশন। ইশ্, মন ভাল হয়ে যায়।

আসো। বসো। রওশন মিষ্টি হেসে অভ্যর্থ্যনা জানায়।

আজম সোফায় গা এলিয়ে বসে। নভেম্বর মাস। ঠান্ডা শুরু হয়েছে। আজকে একটু আগেই হালকা স্নো পড়েছে। পেজা তুলোর মতো। ঘরের মধ্যে উষ্ণতা বিরাজ করছে। আজম পাতলা একটা জ্যাকেট পরে এসেছে। সেটা খুলল। রওশন ওটা ক্লোজেটে রাখল।

কি খাবা!

যা খাওয়াবা।

এখন চা দেই। পরে লাঞ্চ খেয়ে যেয়ো। বেশি কিছু করিনি। আমি যা খাবো তাই। তোমার জন্য আবার স্পেশাল কি। তাই না!!

ঠিক তাই।

তুমি নিজেই একটা স্পেশাল।

চাপা মেরো না।

আচ্ছা তুমি স্পেশাল না, একটা শয়তান। পাজি।

রওশন আজমের পাশেই বসেছে। গা থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রান আসছে।

গান শুনবা!

গান শুনতে ডাকছো নাকি।

আচ্ছা চা দেই।

হু। চা খাই।

চা খেতে খেতে আজম বলল, কেনো ডেকেছো বলো।

মানে! গল্প করতে।

শুধু গল্প করতে! বিশ্বাস হয় না।

তো কি।

গল্প তো ফোনেও করা যায়, কফি শপে বসেও করা যায়। বাসায় আসার তো দরকার নাই।

আমার গান এনেছা!

হুম। দেখাও।

আজম একটা সাদা কাগজ বাড়িয়ে দিল। রওশন ভাবেনি সত্যি আজম ওর জন্য গান লিখেছে। মনে করেছে আজম বাদরামি করছে। গানটা পড়লো। খুউব মিষ্টি রোমান্টিক একটা গান। গানের কথা মন ছুঁয়ে যায়। রওশন এমন খুশী হলো। অকস্মাৎ আজমকে জাড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। আজম একটু হকচকিয়ে গেলো। এতোটা ভাবেনি আজম।

গানটার একটা সুর দিতে হবে।

ব্যবস্থা করে ফেলবো। আগামীতে তোমার একটা একক অনুষ্ঠান করো। আরো কয়েকটা গান লিখে ফেলবো তোমার জন্য। পুরানো নতুন মিলিয়ে একটা অসাধারণ গানের সন্ধ্যা হবে।

আজম আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।

ধুর! প্রেম আবার কি। আমরা বন্ধু। আমার ওসব প্রেম ট্রেম আসে না।

তোমাকে ভালবাসি, বন্ধুর চেয়ে বেশি।

কেনো বলোতো! এতো সহজে প্রেম হয়ে যায়!

জানি না। তোমাকে প্রথম যখন দেখি তখনই কেমন একটা অনুভূতি হয়েছে। শির শিরে।

আচ্ছা একটা গান শোনাও। আমাকে আবার যেতে হবে।

এখনই কি যাবা। খেয়ে যাবা না!

না না আজকে খাওয়ার সময় নাই।

হঠাৎই আজম উঠলো। আজম নিজেও জানে না। ওর মনে হচ্ছে আর থাকা ঠিক হবে না। রওশনের মন আলগা হয়ে আছে। ওরও। বেশি বাড়তে না দেওয়াও ভাল। প্রথমে মনে করেছিল যা হবার হবে। কি যায় আসে! হঠাৎ আজম মাইন্ড চেঞ্জ করলো। ও এমনই। ভুতুড়ে।

৩.

তুমি একটু ভুতুড়ে আছো আজম।

 

ঠিক কইছেন।

আর তো ফোন দিলানা।

আপনার কথা খুব ভাবছিলাম। সত্যি।

কি ভাবছিলা।

ভাবছিলাম যাবো একদিন।

আসো না।

কোথায় আসবো সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম।

পাজী।

সত্যি আপু।

এই চুপ। নো মোর আপু।

ভুতুড়ে কেনো বললেন!

সেদিন হেমায়েতের পার্টি থেকে হুট করে চলে চলে গেলে কেন? আরো কথা ছিল।

এমনি। ভাবলাম কেটে পড়।

এখন বলো কবে আসছো!

আরে আমি তো আমার গরজেই আসবো। বলছিলেন বিজনেস দেবেন।

কাল আসো। কাল শনিবার। কথা বলবো।

কালকে পারবো না। শনিবার আমার অফিস খোলা থাকে আপু। কালকে কয়েকজন ক্লাইন্ট আসবে। রবিবার পারবো।

এই আপু আপু করতে মানা করেছি না।

আচ্ছা বাবা আর করবো না। এই নীলা কেমন আছো!

দুষ্ট। খুউব মেয়ে পটাতে পারো।

মোটেও না। কেউ পটে না।

হুম কইছে তোমারে। সেদিনতো দেখলাম রওশনের সাথে খুউব মাখামাখি করছো। ও ওরকমই। যখন স্বার্থ হাসিল হয়ে যাবে ছুড়ে ফেলবে তোমাকে। ওর অনেক ঘটনা জানি আামি। ওর কাছ থেকে সাবধানে থাকো। তোমাকে ধ্বংস করে দেবে।

যাহ  কি বলো তুমি।

ঠিকই বলি। তুমি ভেবোনা আমি জেলাস।

না না আমি তো মিশতেও চাই না। সেই তো..।

শোনো, আসো। রবিবারেই আসো। আর মেয়ে পটানো বন্ধ করো। আমি তোমার ভাল বন্ধু। ওকে!

কি যে বলো না তুমি । আচ্ছা তোমাকে নীলা করে বলছি। তোমার কেমন লাগছে শুনতে!

কেন, ভালই তো লাগছে।

আচ্ছা সব মহিলারাই নিজেদের খুউব খুকী ভাবে। কারনটা কি! রওশনও তাই। তুমি করে বলার জন্য পাগল হয়ে গেছিল। তবে আজম কেনো যেনো নীলাকে পছন্দ করে ফেললো। নীলার মধ্যে কি যেন আছে যা রওশনের মধ্যে নেই। কী সেটা! একধরণের মিষ্টি আকর্ষন!  নীলার মধ্যে একটা সাবলীলতা আছে। জোর করে আদায় করার মানসিকতা নাই।

বরিবার উইনফোর্ডে আসলো আজম। ৫ কনকর্ড প্লেসে সুন্দর দু’বেডরুমের কন্ডোমনিয়াম নীলার। নিজের। ছিম ছাম করে সাজানো। ছবির মতো। অতো বড় না কিন্তু নীলার জন্য যথেষ্ঠ। নীলার ছোটো একটা মেয়ে আছে। বারো বছর বয়স। তার সাথেই থাকে। আজকে সে বাসায় নাই। বাবার কাছে গেছে। নীলাই সকালে নামিয়ে দিয়ে এসেছে।

অর্ণা নাই। না হলে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম। ওর বাবার ওখানে গেছে। কি খাবা বল!

যা খাওয়াবা তাই। তোমার বাসাটা সুন্দর নীলা। মনটা ভাল হয়ে গেলো।

সত্যি বলছো!

হুম।

একটা সত্যি কথা বলবা!

সিওর।

রওশনের সাথে তোমার কি সম্পর্ক!

কিছুই না জাষ্ট বন্ধু।

তুমি ওর বাসায় যাও!

কেন বলোতো।

না এমনি। ও এমন ভাব করছিল যেন তোমার সাথে কত খাতির। ফ্যামিলী ফ্রেন্ড। ও কিন্তু অনেক রুড এবং ভিনডিক্টিভ।

কি জানি।

তুমি নাকি ওর জন্য গান লিখছ!

তোমাকে বলেছে?

বলল তাই।

খুউব অনুরোধ করলো তাই লিখলাম।

নীলা চা নিয়ে এলো। চায়ের সাথে আরো খাবার। নীলা পরে আছে ঢিলে পাজামা এবং গেঞ্জি। সুন্দর ফিগার নীলার। চোখ ফেরানো কষ্টকর। গা থেকে মিষ্টি গন্ধ বেরুচ্ছে।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে আজম বলল, তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে।

সত্যি বলছো!

সত্যি। তুমি অন্যরকম।

কেমন বলোতো!

ঠিক বোঝাতে পারবো না। তোমার মধ্যে কি যেন একটা আছে। আস্থা পাওয়া যায়। ভয় লাগে না।

নীলা হাসলো হি হি করে। জানো আমি অনেক একা। আমার কোনো বন্ধু নাই। পাঁচ বছর আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।

কেন হলো?

সে অনেক লম্বা কাহিনী। অন্যদিন বলবো।

জানো আমারও বন্ধু নাই।

তুমি আমার অনেক ছোটো।

তাতে কি। বয়সে কিছু যায় আসে না।

ঠিক বলেছ। আমরা তো ভাল বন্ধু হতে পারি।

নিশ্চয়ই পারি।

তোমার কি বিয়ে করার প্লান আছে!

ভাল মেয়ে পেলে করবো। দেখোতো আমার জন্য।

কেমন ভাল!

তোমার মতো ভাল।

সিরিয়াসলি বলো। আমার মনে হয় তুমি জোক করো।

আরে না জোক না।

আমি ভাল তোমাকে কে বলল!

আমি জানি।

তুমি প্রথম পুরুষ যে আমার বাসায় আসলো। কেউ এলাউ না আমার বাসায়।

আমি ভাগ্যবান। আমাকে কেন এলাউ করলা?

কেন জানি না। মনে হলো তুমি অন্যদের মতো না। সব পুরুষরাই এক। ডিভোর্স হওয়ার পর কতজন যে বন্ধুত্ব করতে চায়। দু’ একজনে সাথে মিশেও দেখেছি। সবারই শেষ গন্তব্য বিছানা। আমি কি আর এসব বুঝিনা।

আজম হাসলো। বলল, ঠিক বলেছ।

আমার হাসবেন্ড একজনের সাথে প্রেম করতো। তার সাথে সময় কাটাতো। আমি নিজেই ডিভোর্স করেছি।

আজম নীলার হাত ধরলো । নীলা কিছু বলল না। আজম হাতটা ধরে থাকলো। নীলার বয়স বোঝা যায়না। কী সুন্দর তার হাত। শরীরের গড়ন। নিখুঁত। চিকন দুটো ঠোঁট। ঝকঝকে দাত। আজম নীলাকে একটু কাছে টেনে নিল। নীলা আজমের কাধে মাথা রাখল।

তোমাকে আমার ভাল লেগেছে নীলা।

তোমাকেও। তুমি আমার ভাল বন্ধু। আমি অনেক একা।

আজম নীলার মুখটা তুলে  ওর চিকন ঠোটে চুমু খেলো। নীলাও আবেগে আজমকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। গভীর করে চুমু খেতে থাকলো।

আমাকে শক্ত করে ধারে থাকো আজম।

আজম তার শক্ত বাহু দিয়ে নীলাকে বুকে তুলে নিল।

আই লাভ ইউ নীলা।

লাভ ইউ ঠু আজম।

আমাকে বিয়ে করবে নীলা!

নীলা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। নীলার চোখে জল..।